দুপুর গড়াতেই হলিডে মার্কেটে লোক সমাগম শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ভিড়। ছুটির দিনে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি মানুষ স্টলগুলোতে ঢু মারেন। জমে ওঠে বেচাবিক্রি। সন্ধ্যা নাগাদ জমজমাট হয়ে ওঠে পথবাজারটি। দর্শনার্থীরা ঘুরে ঘুরে দেখে পছন্দসই পণ্য কিনেন।
শনিবার (১০ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি সড়কে ডিএনসিসি-ঐক্য হলিডে মার্কেটে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। ঘরের ছোট আসবাব থেকে শুরু করে সাজসজ্জা, কাপড়, ছোটদের খেলনা, বাদ্যযন্ত্র, গাছ, বই, হরেকরকম খাবার কী নেই দোকানগুলোয়। ছাতার নিচে পাশাপাশি এ ছোট দোকানগুলো যেন গ্রাম্যমেলার কিছুটা হলেও ছোঁয়া দিতে চাইছে শহুরে মানুষদের। প্রতি শুক্র ও শনিবার রাস্তার দুই ধারে বসে দোকানগুলো।
এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের বিক্রয় ও বিপণন এবং এই খাতকে এগিয়ে নিতে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঐক্য ফাউন্ডেশন এই আয়োজন করেছে। বাংলাদেশের কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য ও খাদ্যপণ্য নিয়ে আইসিটি সড়কের দুই পাশে ১০০টি স্টল নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই মার্কেট। ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, পাইলট প্রকল্প হিসেবে আগারগাঁওয়ের ওই সড়কে এ মেলা শুরু করা হয়েছে।
চামড়ার ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠান লেদার ইন অ্যা প্রাইভেট লিমিটেড এই মার্কেটে এসেছে তাদের ব্র্যান্ড ‘গুটিপা’ নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক গাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এটি অনেক ভালো একটি উদ্যোগ। এটি চলমান থাকলে একসময় ভালো সাড়া পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছু সমস্যাও আছে। দুপুরে খাবারের সুব্যবস্থা নেই। ভ্রাম্যমাণ গণশৌচাগারের দুইটি গাড়ি থাকলেও সকালে উদ্বোধনের কিছুক্ষণ পরই এটি আর ব্যবহার উপযোগী নেই।’
অন্যান্য মেলার সঙ্গে এই আয়োজনের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছু দুর্বলতা আছে। ভিক্ষুক ঢুকে পড়ছে। অন্য মেলাগুলোতে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি।’
গণশৌচাগার নিয়ে বিক্রেতাদের মতো ক্রেতাদেরও ছিল একই অভিযোগ। এ বিষয়ে হলিডে মার্কেটের তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, মার্কেটে ৪টি গণশৌচাগার সংবলিত সিটি করপোরেশনের ২টি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি রয়েছে।
স্টলগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঘরের আসবাব, কৃষি পণ্য, কাপড়, আইসক্রিম, ফাস্টফুড, মৌসুমি ফল ও ফলের জুস, কেক, মসলা, খেলনা, বাদ্যযন্ত্র, হস্তশিল্প, প্রসাধনী, দেশি ঐতিহ্যবাহী পিঠা, বিভিন্ন ভেষজ পণ্য, আঞ্চলিক বিখ্যাত খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি ছোট বইমেলাও বসেছে। যেখানে শব্দশৈলী, সপ্তডিঙা, ভাষাচিত্র, বাংলার প্রকাশনসহ ১০টি প্রকাশনী তাদের বই নিয়ে আলাদা ১০টি স্টলে দাঁড়িয়ে আছেন। স্টলগুলোয় মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, ছোটদের গল্প-কবিতা, জীবনীগ্রন্থ, মোটিবেশনাল, ধর্মীয়, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, ভাষাশিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের বই দেখা যায়। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কেউ কেউ বইগুলো উল্টে-পাল্টে দেখছেন, অনেকেই পছন্দের বই কিনে নিচ্ছেন।
গত সপ্তাহে এ মেলায় ‘মিনি বইমেলার’ সংযোজন করা হয়েছে। এতে যুক্ত হয়েছে ১০টি প্রকাশনীর দশটি স্টল।
বইয়ের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ কেউ বলেন এ মেলায় আবার বই কে কিনবে? মূলত যারা বই ভালোবাসে তারা কিনবেই। শুরুতে ক্রেতা কিছুটা কম। তবে আগ্রহ নিয়ে বই উল্টে-পাল্টে দেখছেন অনেকেই। আরও কিছুদিন গেলে এবং আরও কিছু বইয়ের দোকান বাড়াতে পারলে বইয়ের চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
আগারগাঁও তালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান জানান, ‘এ মেলা আমার খুব পছন্দের। যখনই এ মেলা বসে আমি দেখতে আসি। প্রত্যেকটা দোকান ঘুরেঘুরে দেখি। বইয়ের দোকান থেকে একটি ছড়ার বই এবং আরেকটি গল্পের বই নিয়েছি।’
বইমেলা পেরিয়ে কিছু স্টল পেরুলেই সামনে দেখা মিলবে নাগরদোলার। নাগরদোলা ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকে শিশুরা। টিকিট কিনে শিশুর বায়না মেটাতে বাবাসহ উঠে পড়েন নাগরদোলায়। মেলায় নাগরদোলা থাকায় গ্রাম্য মেলার ছোঁয়া যেন আরেকটু বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
হলিডে মার্কেটে দুই দিনের জন্য বিক্রেতাদের নিবন্ধন ফি পাঁচ হাজার টাকা। ছোট-বড় প্রায় সব উদ্যোক্তাই টাকার এই পরিমাণ নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বিক্রেতারা জানান, দুই দিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা অনেক বেশি, বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তাদের পক্ষে এই খরচ উঠিয়ে লাভ করাটা কষ্টকর। নিবন্ধন ফি অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধাও কম বলে জানান বিক্রেতারা।
স্টল ভাড়া নিয়ে তথ্য কেন্দ্র জানায়, বিদ্যুৎ ডেসকো থেকে নেওয়া হয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য জেনারেটরেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে অনেক খরচ পড়ে যায়। যার কারণে স্টল ভাড়া বেশি মনে হতে পারে।
১০০টি স্টল প্রতিদিন ভাড়া দেওয়া হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সব স্টল ভাড়া হয় না। বিসিকসহ কিছু সামাজিক সংগঠনের জন্য ৫টি স্টল রিজার্ভ থাকে। আমাদের উদ্দেশ্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। তাই এগুলো তাদের ফ্রিতে দেওয়া হয়। তারা না আসলে এসব স্টল খালি থাকে।’
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, এ হলিডে মার্কেটে এসএমই উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য যেমন— চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, হস্তশিল্প, ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্য, হোমডেকর পণ্য, অর্গানিক কৃষি পণ্য, পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি পণ্য, কৃষি পণ্য, খাদ্য পণ্য ও পানীয় নিয়ে বসবেন। হলিডে মার্কেটে সাংস্কৃতিক আয়োজনসহ নানান ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে ঢাকাবাসীর জন্য।
News Source: Protidinerbangladesh.com